স্টাফ রিপোর্টার :
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই রায় দেন।
ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম ও প্রবীরের পক্ষের আইনজীবী আমিনুল গনী টিটো এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন প্রবীর সিকদার। রায় ঘোষণার পর প্রবীর সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন।
প্রবীর সিকদারের আইনজীবী আমিনুল গনী টিটো সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলাটি একটি ঐতিহাসিক মামলা হিসেবেই লিপিবদ্ধ থাকবে। আমরা অভিযোগ মেনে নিয়েই আইনি লড়াই করেছি। সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের ফেসবুক স্ট্যাটাস কারো মানহানি করেনি। ওই স্ট্যাটাসটিতে ছিল প্রবীরের জীবনশঙ্কার এক অসহায় আর্জি। আদালতের রায়ে প্রবীর সিকদার নির্দোষ, শুধু এটা প্রমাণিত হয়নি, পরোক্ষে ওই রায়ে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখা হয়েছে। আমরা আদালতের কাছে কৃতজ্ঞ।
মামলার বিবরণে প্রকাশ, ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট বিকেলে ঢাকায় গ্রেফতার হন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। পরে সাবেক এক মন্ত্রীর পক্ষে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন ফরিদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা ও পিপি এডভোকেট স্বপন পাল। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে প্রবীরকে ওইদিন রাতেই ঢাকা থেকে ফরিদপুরে নেওয়া হয়। ফরিদপুরের থানায় তাকে নির্যাতন করা হয়। তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশও দিয়েছিলেন ফরিদপুর আদালতের এক বিচারক। দেশ বিদেশে প্রবল নিন্দা ও প্রতিবাদের মুখে রিমান্ডে নেওয়া ছাড়াই ১৯ আগস্ট জামিনে মুক্তি দেওয়া হয় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রবীর সিকদার ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট ফেসবুকে তৎকালীন এলজিআরডি মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। তার ওই স্ট্যাটাসে মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মনির হোসেন ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই বছরের ৪ আগস্ট প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
গত ২২ মার্চ এ মামলায় রাষ্ট্র এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ১ এপ্রিল রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত। এরপর একদফা পিছিয়ে ১১ এপ্রিল রায়ের দিন ধার্য করা হয়। তবে করোনা পরিস্থিতিতে আদালত বন্ধ থাকায় আর রায় ঘোষণা হয়নি। আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলে গত ৮ সেপ্টেম্বর বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তবে রায় প্রস্তুত না হওয়ায় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন একদিন পিছিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধীরা প্রবীর সিকদারের বাবা কাকা দাদুসহ তার ১৪ স্বজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকাকালে রাজাকারদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন লেখার পর সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলায় তাকে একটি পা হারাতে হয় ও তার একটি হাত হারায় স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা। শরীরে এখনো তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন যন্ত্রণাময় বোমা-গুলির অসংখ্য টুকরো।
আদালতে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের পক্ষে সিনিয়র এডভোকেট আমিনুল গনী টিটো ছাড়াও আইনি লড়াই চালিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের এডভোকেট আমিরুল হক তুহিন, এডভোকেট মলয় সাহাসহ এক ঝাঁক তরুণ ও নিবেদিত প্রাণ আইনজীবী।