1. almoazzintv@gmail.com : Moniruzzaman Monnu : Moniruzzaman Monnu
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন

করোনায় সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৩৮৭ Time View

-জুনায়েদ হুসাইন
করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে ইতিহাসের কঠিনতম একটি অর্থনৈতিক মন্দার বছর পার করল বাংলাদেশ। অর্থনীতির এমন কোন খাত নেই যা এ বছর আক্রান্ত হয়নি। অসংখ্য মানুষের রুটি রুজিতে টান পড়েছে। ব্যাপকভাবে কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। অনেকে কাজ হারিয়ে গ্রামে চলে গেছেন।

এছাড়া রাজস্ব আদায়ে ঘাটতিসহ রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়া বিনিয়োগ স্থবিরতা কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ায় অর্থনীতি বড় চ্যালেঞ্জে রয়েছে। পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেড়েছে সরকারের ঋণ।

প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার নতুন করে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ লেগেছে বিশ্বজুড়ে। এমন নেতিবাচক খবরের মধ্যেই আবার আশার আলো দেখিয়েছে রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও কৃষি খাতে। এদিকে ২০২০ সালের শুরুতে দেশের অর্থনীতি থমকে দাঁড়ালেও সব শ্রেণির মানুষের কর্মস্পৃহা ও সরকারের চেষ্টায় দ্রুততম সময়েই আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি। তবে বৈশ্বিক করোনার গতিপথ কোনদিকে যায়, তার ওপরই নির্ভর করছে আগামীর অর্থনীতি। যদিও এসময়ের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে দারিদ্রের হার। ৭৫ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। শিল্পখাতে নেমে এসেছিল স্থবিরতা। বড় বড় শিল্পের মালিক থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এখনও ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। পাশাপাশি ধস নেমেছে বিদেশী বিনিয়োগ নিবন্ধনে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী। বিদেশ ফেরত কর্মীদের নিয়েও দিশেহারা সরকার। তবে তাৎক্ষনিক ভাবে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির সংকট সামলাতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

করোনাকালে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে কৃষি। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১৫.৪৪ শতাংশ অবদান কৃষি ও সেবা খাতের। কর্মসংস্থানেও বড় ভূমিকা রাখছে খাতটি। আয় কমে যাওয়ায় শহরত্যাগী মানুষগুলোকেও ধারণ করেছে গ্রামীণ অর্থনীতি। ইপিবি হিসাব অনুযায়ী বেড়েছে রপ্তানী আয়ঃ ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সার্বিক ভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৫৯২ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের (১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) পণ্য। আগের অর্থ বছরের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৭১ লাখ ডলারের পণ্য। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে সরকারি লক্ষ্য অনুযায়ী রপ্তানি আয় করতে হলে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে হবে। সব মিলিয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছর শেষে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের (৪ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা) রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য অর্জন চ্যালেঞ্জের মুখে। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সার্বিক ভাবে পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে করোনায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেও ভাল অবস্থায় আছে দেশের পুঁজিবাজার। এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটালের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয় গত জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে পুঁজি বাজারের উত্থানে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে বাংলাদেশ। রেমিট্যান্সে স্বস্তিঃ করোনা ভাইরাসের মহামারির মধ্যেও প্রবাসী বাংলাদেশীরা রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন। গত নভেম্বরে তারা ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। সব মিলিয়ে ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে এসেছে ২ হাজার ৫০ কোটি ডলার (১ লাখ ৭৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা) যা ২০১৯ সালের পুরো সময়ের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। এর আগে বাংলাদেশে এক বছরে এত বেশি রেমিট্যান্স আর কখনও আসেনি। ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
তবে বিদেশী বিনিয়োগ, বৈদেশিক বাণিজ্য, রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি-এসব ক্ষেত্রে নেতিবাচক ধারা চলছে।
বিদেশী বিনিয়োগে ধাক্কাঃ বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগে (এফডিআই) বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে করোনার কারণে। ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে কিছু বিনিয়োগ এলেও পরের দুই মাস (এপ্রিল ও মে) বিনিয়োগ শুন্য থাকে। সে সময়ে চলা লক ডাউনের কারণে সারা বিশ্বই কার্যত অচল হয়ে যায়। ২০২০-২১ অর্থ বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশে ৫৪ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। গত অর্থ বছরের একই সময়ে এসেছিল ৭১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এই হিসাবে এই তিন মাসে মোট এফ ডিআই কমেছে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতিঃ এবারের বাজেটে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নানামুখী পদক্ষেপ থাকলেও লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে আদায়ের ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে। গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছিল ২ লাখ ১৮ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য ৫১ শতাংশ বাড়িয়ে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর এর হিসাব অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে রয়েছে ২৫ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা।
কমেছে রপ্তানী আদেশঃ বাংলাদেশের রপ্তানীর প্রায় ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। করোনার প্রথম ধাক্কা কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় ঢেউয়ে টালমাটাল ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল। বিজিএমই এর হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরের প্রথম ২০ দিনে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানী কমেছে সোয়া পাঁচ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে ডিসেম্বরের শেষে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, যদিও কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের পথ এখনো রুদ্ধ। দ্রুত বাড়ছে বেকার ও দারিদ্রের হার।
নতুন কর্মসংস্থান প্রায় বন্ধ। বিদেশেও নতুন করে যাচ্ছে না কোনো কর্মী। প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বছরের শুরুতে ভাটা পড়লেই পরবর্তী সময়ে তা আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভে নতুন নতুন রেকর্ড হয়েছে সংকট সত্ত্বেও। ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে রিজার্ভ। এছাড়া করোনার কারণে বিশ্বের অর্থনীতি এই বছরে অন্তত ৩ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ৫.৬ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড। চলমান করোনা মহামারি মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে।
লেখকঃ জুনায়েদ হুসাইন
প্রভাষক, অর্থনীতি ও বাঃ ভূঃ
আখচাষী মহিলা ডিগ্রি কলেজ
মধুখালী, ফরিদপুর।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category