মো. সহিদুল ইসলাম
দেশ স্বাধীনের পর পেরিয়ে গেছে যুগের পর যুগ। গ্রামে বেড়ে ওঠা মানুষগুলোও কাদা—মাটি মাখিয়ে চলতে চলতে বার্ধক্য কাটিয়ে অনেকেই এখন আর নেই। আবার কেউ বেঁচে আছেন কালের সাক্ষী হয়ে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভাগ্য বদল হয়নি ফরিদপুর জেলার মধুখালী মেগচামী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড তথা বনগ্রাম গ্রামবাসীর। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও পাকা সড়কতো দুরের কথা ইটের রাস্তা দেখেনি এ গ্রামের মানুষ। ফলে শতাধিক পরিবারের দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। এই গ্রামের মানুষের কাছে এখন ইটের সড়ক যেন আলাউদ্দিনের চেরাগের মতো।
জানা যায়, মেগচামী ইউনিয়নের নরকোনা আঞ্চলিক মহা সড়কের পাশে অবস্থিত এই গ্রামটি। এই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ইট পাথরের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও ছোঁয়া লাগেনি এই গ্রামটিতে। দেখলেই মনে হয় অভিশপ্ত একটি গ্রাম। এই গ্রামে প্রায় ১২০পরিবার তথা ৬০০ লোকের বেশি মানুষের বসবাস। সমগ্র দেশে দৃষ্টান্তহীন উন্নয়ন সাধন হলেও এর ছিটেফোঁটা পড়েনি এ গ্রামে। এর পেছনে জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। গ্রামটিতে ১টি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। বেসরকারী প্রাইমারি স্কুল গ্রামটির মধ্য স্থানে থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বর্ষার দিনে প্রতিনিয়ত কাদামাটি দিয়ে স্কুলে আসা—যাওয়া একমাত্র রাস্তা । বর্ষার মৌসুমে পা সিটকে পড়ে গেলেই বন্ধ হয়ে যায় স্কুলে যাওয়া। এভাবেই প্রতিনিয়ত ছোট ছোট দুর্ঘটনার শিকার হন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এই কাদামাটি পেরিয়েই উচ্চশিক্ষা করতে যেতে হয় শহরে। আর এ কারণেই পিছিয়ে রয়েছেন নারী শিক্ষার্থীরা এমনও দাবি করেন অনেক নারী শিক্ষার্থীরা।
জন্মসূত্রে এই গ্রামের বাসিন্দা ভূলেন বিশ^াস জানান, এই গ্রামের মাটির নির্মিত গ্রামীন সড়কে আজও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যার কারনে যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয়দের ১২০ পরিবারের প্রায় ৬০০ মানুষ। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলে সড়কটির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। প্রধান সড়ক থেকে গাড়ি ঢুকানো যায়না সড়কে। ভোট কেন্দ্রিক জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়নের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এলাকার মানুষের সাথে কেবল প্রতারণাই করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। তারা আরো জানান, বর্তমানে প্রতিটি ঘরে স্কুল কলেজ ছাত্র—ছাত্রী রয়েছে। গ্রামে কোন পাকা সড়কতো দুরের কথা ইটের রাস্তা না থাকায় বৃষ্টি পড়লে সবচেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব শিক্ষার্থীদের। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন , গ্রামের প্রধান সড়কটি শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে সড়কটিতে কাঁদা হয়ে যায়। এই কাদামাটি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বর্ষার মৌসুমে জুতা পড়ে রাস্তায় চলা যায় না। উন্নয়নের কথা শুনলেও চোখে দেখি না। আমাদের রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দরা মনের কষ্ট নিয়ে বলেন, বয়স প্রায় ৫৪ বছরের এর কাছাকাছি, আমাদের গ্রামের কোন পরিবর্তন দেখিনা, মরার আগে পাকা রাস্তা দেখে যেতে পারবো কিনা সেটাও মনে হয় সম্ভব না। সব জায়গায় উন্নয়ন হয় আমাদের এলাকার উন্নয়ন হয় না। এমনকি আজ পর্যন্ত ইটের রাস্তা দেখতে পেলাম না ।
Exif_JPEG_420
বনগ্রাম বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক যতীন্দ্রনাথ বিশ^াস বলেন,আমাদের দুঃখ—কষ্ট, দুর্ভোগের কথা কেউ শুনে না। আমাদের ভোগান্তির কথা বলে বোঝানো যাবে না, নিজ চোখে দেখতে হবে। আমরা ঠিকমতো হাটবাজারে যেতে পারি না। আমাদের ছেলেমেয়েরা কষ্ট করে স্কুল কলেজে যায়। এভাবে কত কাল কষ্ট করতে হবে কে জানে।
এই প্রসঙ্গে মেগচামী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুপেন বিশ^াস বলেন, মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, সড়কটি অন্তত দরকার। পুরো ইউনিয়নের ভিতরে একমাত্র ওয়ার্ড যেখানে কোন ইট পাথরের ছোঁয়া লাগেনি।
মেগচামী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ সাব্বির উদ্দীন সাবির বলেন, এই গ্রামে এখনো পর্যন্ত কোন পাকা রাস্তাতো দুরের কথা এমনকি কোন ইটের রাস্তা নেই। আমরা রাস্তাটি ইটের রাস্তা করার জন্য মধুখালী প্রকৌশলী অফিস ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এই রাস্তার জন্য কাগজ পাঠিয়েছি। আশা করি খুব শীঘ্রই একটা সুফল পাব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মধুখালী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, তবে এ রাস্তা এখনো প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। প্রক্রিয়াধীন আছে।