1. almoazzintv@gmail.com : Moniruzzaman Monnu : Moniruzzaman Monnu
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০৬ অপরাহ্ন

বোয়ালমারীতে শওকত মাস্টার অন্ধত্ব নিয়েও সমাজে ছড়াচ্ছেন জ্ঞানের আলো 

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১
  • ৩৪৭ Time View
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) :
নাম তার শওকত আলী। পেশায় একজন প্রাইভেট মাস্টার। লোকাল শওকত মাস্টার নামে সবার কাছে এক নামে পরিচিত। ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসদরের গণিতের শিক্ষক মো. শওকত আলী।
চোখের আলো নেই, তবু সমাজের বুকে ছড়াচ্ছেন জ্ঞানের আলো। এটাই তার নেশা-পেশা। টিউশনি করতে করতে নিজের চোখের আলো হারিয়ে গেছে। তবুও তিনি শিক্ষার আলো জ্বেলে চলছেন। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই ভাল নেই, এই মানুষ গড়ার কারিগর। খেয়ে না খেয়ে দিন চলছে তার। স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
জানাগেছে, পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে নিজে বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি। কিন্তু এ পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই হাজার দুর্বল মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীকে দেখিয়েছেন জ্ঞানের আলো। এভাবে কেটেছে প্রায় ৩০/৩৫ বছর। ২০০৫ সালে হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। চোখের রোটিনা নার্ভ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাওয়ায় অন্ধত্ব বরণ করেন এ শিক্ষক। বাংলাদেশ ও ভারতের মাদ্রাজে চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিজের যা সঞ্চয় তার সবটা শেষ করেও ভালো হয়নি চোখের দৃষ্টি। কিন্তু তিলে তিলে জমানো সব অর্থ শেষ করে এখন সহায় সম্বলহীন। নিজের ভিটেমাটি বলতে কিছুই নেই। ভাড়া বাড়িতে টিউশনি করতে করতে আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানবেতর জীবনযাপন করে কোনমতে বেঁচে আছেন।
আত্মমর্যাদা বোধ প্রগাঢ়ভাবে বাঁধা দিয়েছে কারো কাছে হাত পাততে। তাই ভালো চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে অন্ধত্ব বরণ করে নিয়েছেন। কিন্তু থেমে নেই তার জ্ঞান ছড়ানোর ব্রত। অন্ধত্ব নিয়ে এখনো পড়ান তিনি। দিব্যি ব্লাকবোর্ডে কষে যান গণিতের জটিল জটিল অংকের সমাধান। শিক্ষার্থীর দুর্বল দিককে চিহ্নিত করে মেধানুযায়ী সহজ পাঠদান করে উপযুক্ত করে গড়ে তোলাই এ শিক্ষকের বড় সাফল্য। এ জন্য অনেক অভিভাবক এখনো তাদের দুর্বল ছেলে-মেয়ের পথের দিশারী হিসেবে তাকেই বেছে নেন।
আশির দশকে মাগুরা জেলা থেকে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বোয়ালমারীতে আসেন তিনি। আত্মীয়তার সূত্রে বোয়ালমারী  উপজেলার মরহুম শেখ আক্কাচ আলীর পরিবারের সদস্যদের পড়ানোর দায়িত্ব নেন সে সময়। তার তত্ত্বাবধানে এ পরিবারের সবাই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে।
১৯৮৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া ১০ জন শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিয়ে কোচিং করতে পরবর্তী বছর প্রত্যেকে ভালো ফলাফল করলে নাম ছড়িয়ে পড়ে তার। সেই থেকে শুরু। এরপর থেকে যান বোয়ালমারীতেই। পেশা হিসেবে বেছে নেন প্রাইভেট শিক্ষকতা। সে সময় প্রতিবছর মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এসএসসিতে অকৃতকার্য দুর্বল শিক্ষার্থীদের ভিড় জমতে থাকতো। দুর্বল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছেও ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়ায় শওকত আলী। দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ ভাড়া বাসায় গড়ে তুলেন আবাসিক কোচিং ব্যবস্থা।
আবাসিক-অনাবাসিক মিলে কোনো কোনো বছর ১০০ থেকে ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে ব্যাচ করে পাঠদান দিতেন তিনি। শিক্ষার্থীদের ভিড়ে এক সময় খাওয়ার সময় না পেলেও অন্ধত্ব বরণের পর থেকে ধীরে ধীরে কমে আসে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। বর্তমানে ১০/১২ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়িয়ে কষ্টেসৃষ্টে দিনানিপাত করছেন তিনি। তার হাতে শিক্ষার আলো নেওয়া অনেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত, এর মধ্যে রয়েছে, বেশ কয়েকজন বিসিএস ক্যাডার, এমবিবিএস ডাক্তার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ অফিসার, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে এ শিক্ষকের, মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। ছেলেও বিয়ে করে বউ নিয়ে ঢাকায় থাকে। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করলেও যা বেতন পায় তাতে তার সংসার চলাতে কষ্ট হয়।
ইচ্ছা ছিল এক টুকরো জমি ক্রয় করে নিজের একটা বাড়ি করার। কিন্তু চোখের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সঞ্চিত টাকার সবটাই শেষ হয়ে গেছে। ভালো চিকিৎসা করতে গেলে হয়তো আবার চোখের আলো ফিরে আসতো। কিন্তু অর্থের অভাবে ভারত ছাড়া দেশের বাইরে কোথাও যাওয়া সম্ভব হয়নি। ধীরে ধীরে চোখের রোটিনা নার্ভ শুকিয়ে ক্ষীণ আশাটিও এখন মৃতপ্রায়।
শিক্ষক শওকত আলী জানান, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে নিজের বা সংসারের কথা চিন্তা করিনি। কয়েক বছর গরিব ছেলে-মেয়েকে বিনা বেতনে পড়িয়েছি। এসএসসিতে ফরম পূরণ করতে না পারা ছাত্রছাত্রীদের নিজের টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করতে সহযোগিতা করেছি। এখন নিজেই চলতে পারিনা। সত্যি বলতে কি আমি ভীষণ কষ্টে আছি। আমি যেন সেই বাতিওয়ালা, পথে পথে যে আলো জ্বালিয়ে ফেরি, অথচ নিজের ঘরেই নেই যার আলো জ্বালাবার সামর্থ্য!

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category