এনবি ডেস্ক :
গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার আব্দুল মান্নান হাওলাদার ওরফে আব্দুল মান্নান ডিলার ওরফে মান্নানসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে। বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
অন্য দণ্ডিতরা হলেন- আশ্রাব আলী ওরফে আশরাফ আলী হাওলাদার, মো. মহারাজ হাওলাদার ওরফে হাতকাটা মহারাজ এবং মো. নুরুল আমিন হাওলাদার। এদের মধ্যে নুরুল আমিন হাওলাদার পলাতক।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় শুনানি করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম, তিনি একই সঙ্গে পলাতক আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।
তবে দণ্ডিতরা ন্যায়বিচার পাননি বলে মনে করেন দণ্ডিতদের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। এ আইনজীবীর ভাষ্য, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে দণ্ডিতরা ন্যায় বিচার পাবেন।
অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। দণ্ডিতরা মুক্তিযুদ্ধের সময় কনভেনশন মুসলিম লীগের সমর্থক হলেও গ্রেপ্তার বা বিচার শুরুর সময় তারা জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। দুই বছর তদন্তের পর ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর প্রসিকিউশনে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় ট্রাইব্যুনারের তদন্ত সংস্থা। সাত আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তদন্ত চলার সময় জেলে থাকা অবস্থায় এবং বিচার চলাকালে তিন আসামির মৃত্যু হয়। যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।ওই বছর ৬ মার্চ তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। একই বছর ১১ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। পরে ৭ অক্টোবর সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচারিক কাজ শুরু হয়। সাক্ষ্য-জেরা ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্কের পর গত ২১ মে মামলাটি রায়ের অপেক্ষায় রাখেন ট্রাইব্যুনাল।ভান্ডারিয়া থানার পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামের সাত জনকে ধরে নিয়ে হত্যা, চরখালী গ্রামের সুরবালা দাসীকে ধর্ষণ, চরখালী গ্রামের চন্দ্র কান্তি মিস্ত্রি ও মনোরঞ্জন মিস্ত্রিকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও পূর্ব পশারিবুনিয়া ও হাতালিয়া গ্রামের ১৮ জনকে হত্যার অভিযোগ ছাড়াও দণ্ডিতদের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। ট্রাইব্যুনাল হাতালিয়া গ্রামের ১৮ জনকে হত্যার অভিযোগকে গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করেছেন। চার আসামির বিরুদ্ধে গণহত্যা সংক্রান্ত চতুর্থ অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
পলাতক নুরুল আমিন হাওলাদারকে গ্রেপ্তারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে বা সে নিজে থেকে আত্মসমর্পণ করলে তাকে রায়ের অনুলিপি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।