1. almoazzintv@gmail.com : Moniruzzaman Monnu : Moniruzzaman Monnu
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন

মধুখালীতে রাতের আঁধারে মধুমতি নদীর লাখ লাখ টাকার মাটি লুটে নিচ্ছে ইট ভাটার মালিক প্রশাসনের কোন তৎপরতা নেই

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ২৪৫ Time View

নিজস্ব প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের রায়জাদাপুরে মধুমতি নদী তীর থেকে প্রতিরাতে বেকু দিয়ে কেটে ট্রাক ভরে লুট করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকার মাটি। গত দুই মাস ধরে নদী সংলগ্ন ইট ভাটার মালিক পক্ষের নেতৃত্বে এভাবে কোটি টাকার মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। এর ফলে মধুমতি নদীর বুকে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ নতুন চরের ফসলি জমি বিনষ্ট হলেও প্রশাসনের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই তারা নদীর মাটি লুট করে নিচ্ছে। নিজেদের ভাটার ইট তৈরির পাশাপাশি আশেপাশের বিভিন্ন ভাটাতেও বিক্রি করছে এই মাটি। এভাবে প্রতিরাতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মাটি বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটার ফলে নষ্ট হচ্ছে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের এক ফসলি জমি। পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনের তীব্র আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত বছর স্থানীয় প্রশাসন সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করলেও এবার তাতে কোন তোয়াক্কা করছে না জড়িতরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রায়জাদাপুরের সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদীর ওপাড়ে মাগুরা জেলার পালপাড়া ঘাট। এপাড়ে রায়জাদাপুরে নদীর প্রায় দেড়গুন জমি জুড়ে চর জেগে উঠেছে। স্থানীয়রা কৃষকেরা জেগে ওঠা চরের নতুন জমিতে এক ফসলি শষ্য রোপন করে। নতুন পলি মাটিতে ফসলগুলো বেড়ে উঠছে লকলকিয়ে। নদীতীরের সাথেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘এমএনজেড ব্রিকস’ নামে একটি ইট ভাটা। প্রায় সাত একর জমির উপর গড়ে তোলা বিশালাকারের এই ইটভাটার মালিক হচ্ছেন মিলন বিশ্বাস, মিন্টু কাজী, নাছির মোল্যা ও জিয়াউর রহমান নামে চার ব্যক্তি। এই এমএনজেড ইট ভাটার মালিক পক্ষের নেতৃত্বেই প্রতিরাতে বেকু মেশিন দিয়ে মধুমতি নদী থেকে মাটি কেটে ট্রাকে ভরে নিজেদের ভাটায় মজুদ করার পাশাপাশি বাইরেও বিক্রি করছেন। সন্ধার পর থেকে সারারাত ধরে এভাবে বেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করে লুট করা হচ্ছে।
নদী পাড়ের মাটি কাটার এই দৃশ্য দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। খুবই ভয়ংকরভাবে এবড়োথেবড়ো গভীর খাদ কেটে মাটি লুট করে নিয়ে যাচ্ছ মাটি খেকো ওই মহল। নদী পাড়ের মানুষ জানালেন, গত বছরের ৮ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশিকুর রহমান চৌধুরী সেখানে বালু উত্তোলনকারীদের মোবাইল কোর্টে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা জরিমান করেন। তবে তাতে দমেনি মাটিখেকোরা। জানা গেছে, মধুমতি নদীর এই স্থানে প্রতিরাতেই উত্তোলন করা হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা মূল্যমানের মাটি। প্রতি ট্রাক মাটি ৯শ’ থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি করা হয়। এজন্য প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট নিয়েও তারা চিন্তিত নন। জরিমানার তিনগুণ টাকা একরাতেই তুলে নেয়া যায়। মাটি বিক্রির টাকা দিয়েই জরিমানা পরিশোধ হয়ে যাবে। এছাড়া এমএনজেড ব্রিকসের বিরাট এলাকা জুড়ে মাটির পাহাড় সমান স্তুপ করে রাখা হয়েছে। কাঁচা মাটির স্তপ ছাড়াও কয়েক লাখ কাঁচা ইট বানিয়ে খামাল দিয়ে মজুদ করা রয়েছে। পুরো ভাটা জুড়ে মাটি আর কাঁচা ইটের খামাল ছাড়াও খড়ি পোড়ানোর মহাযজ্ঞ চলছে। ভাটার কাছে গেলেই চোখে পড়ে ইট পোড়ানোর জন্য মজুদ করে রাখা ছোট বড় গাছের গুড়ি। কয়লার কোনো চিহ্নই নেই। গাছ পুড়িয়েই তৈরি করা হচ্ছে ইট।
মধুমতি নদীর এই জেগে ওঠা চরের বুকে একমনে ধানের চারা রোপন করছিলেন আখের আলী নামে এক বয়োবৃদ্ধ কৃষক। জানালেন, তাদের জমির সাথে লাগোয়া এই জমিতে ধানের চারা লাগাচ্ছেন। তবে ইটভাটার মালিক তার বীজতলা সহকারেই মাটি কেটে নিবে বলে মনে হচ্ছে। তিনি জানান, বছরের ৬ মাস এখানে পানি থাকেনা। তখন তারা এখানে চাষাবাদ করেন। তবে যেভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে তাতে আগামীতে তারা আর এই জমিতে কিছু চাষ করতে পারবেন বলে মনে হয়না।
স্থানীয়রা জানান, মধুমতির জেগে ওঠা চরের জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হলেও ফি বছর জেগে ওঠা এই জমিতে সাধারণত লাগোয়া জমির কৃষকেরাই বিভিন্ন ফসল আবাদ করে থাকেন। তবে এমএনজেড ব্রিকস রায়জাদাপুরের খেয়াঘাটের প্রায় কয়েকশো বর্গমিটার বিস্তৃত নদী পাড়ের জমি থেকে গত দুই বছর যাবত মাটি কেটে নিচ্ছে। এতে তাদের খাদ্যশষ্য উৎপাদনের সুযোগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তারা জানান, ভাটার মালিকেরা অর্থবিত্তের মালিক ও প্রভাবশালী। তাদের কেউ কিছু বলার সাহস রাখেনা। বিভিন্ন মহলকে তারা মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে নিয়েছে। এভাবে মাটি কেটে নেয়ায় আশেপাশের ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেখানে নদী তীরে ভাঙ্গনের আশঙ্কাও রয়েছে।
এব্যাপারে এমএনজেড ব্রিকসের মালিকদের একজন মিলন বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, আমাদের ইট ভাটায় সব মাটি বাইরে থেকে আনা। নদীর কোন মাটি নেই। পরে রাতের বেলায় বেকু দিয়ে মাটি কাটেন কেনো? এ প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, নদীর পাড়ের ব্যক্তি মালিকানা জমি থেকে তারা মাটি কাটছেন। তবে এসব জমি থেকে মাটি কাটার কোন অনুমতি তাদের নেই বলে স্বীকার করেন। নিজাম মোল্যা নামে আরেকজন মালিক বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্নজনেরা আসে ভাটায়। তাদের ম্যানেজ করতে হয়। এবছর ঢাকা থেকেই তিন গ্রুপ এসেছিলো।
ভাটার এসব তথ্য ও ছবি সংগ্রহকালে সেখানকার ম্যানেজার বলেন, আপনারা এভাবে ছবি না তুলে অফিসে বসে মালিকদের সাথে কথা বলেন। একটা ব্যবস্থা হবেনে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, এবছর সেখানে মাটি কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে গত বছর মাটি কাটার অভিযোগে এমএনজেড ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টে জরিমানা করা হয়েছিলো। এবারেরও মাটি কেটে থাকলে খবর নিয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category