এনবি ডেস্ক :
পুলিশকে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১০ এপ্রিল) দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পুলিশের ‘সার্ভিস ডেস্ক’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা ছিল বাংলাদেশের পুলিশ হবে জনগণের পুলিশ। পুলিশের এ দুটি উদ্যোগই গণমুখী হয়েছে।
পুলিশকে জনগণের সেবক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ মানুষের আস্থা অর্জন করবে এটাই আমরা চাই। পুলিশ জনগণের সেবক হবে, পুলিশের কাছে গেলে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে এ আত্মবিশ্বাস মানুষের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি থানায় সার্ভিস ডেস্কের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়ন শুরু করেছি। সর্বস্তরের মানুষ যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পায় সে লক্ষ্যে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মুজিববর্ষে আমাদের লক্ষ্য ছিল, যে কাজ জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প দিয়ে শুরু করেছিলেন আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। এর সুফল সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর করে দেওয়ার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।
বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা জনগণের পুলিশ। আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, জনগণের পাশেই থাকবেন- এটাই আমাদের লক্ষ্য। সবাইকে সততার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশের আধুনিকায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হেল্প ডেস্কে যারা কাজ করবেন তাদের প্রয়োজনে বিদেশে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে। যে বাহিনী জনগণের বাহিনী তাকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলবো।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মুজিববর্ষকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের প্রতিটি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্ক চালুর মাধ্যমে দেশের জনগণের কল্যাণে আরও একটি মহতি উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে সার্ভিস ডেস্ক স্থাপনের কাজ সুসম্পন্ন করেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এ লক্ষ্য পূরণে সরকার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের প্রতিটি থানায় গৃহ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৫১৯টি থানায় ৫২০টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। আজ প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০০ গৃহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, দেশের প্রতিটি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন এবং গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ বাংলাদেশ পুলিশের একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু গণমানুষের নেতা ছিলেন। তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে পুলিশের এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাসীর কাছে এক বিস্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল। পুলিশ দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অনন্য অবদান রাখছে। করোনাকালে পুলিশের ভূমিকা বাঙালি জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে’- বলেন আখতার হোসেন।
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল আত্মপ্রত্যয়ী এক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, যিনি নিজ কর্মের উজ্জ্বল দীপ্তি ছড়িয়ে সারাবিশ্বে এক অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। গণমানুষের অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন ইস্পাত কঠিন, অকুতোভয় এক সংশপ্তক। বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এক মহান রাষ্ট্রনায়ক; মুক্তি ও মানবতার এক প্রোজ্জ্বল বাতিঘর।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘শ্মশান বাংলাকে আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চাই। সেই বাংলায় আগামী দিনের মায়েরা হাসবে, শিশুরা খেলবে। আমরা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলবো’।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনস প্রান্ত থেকে রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, র়ংপুরের পীরগঞ্জ থানা থেকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, মাগুরা সদর থানা থেকে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। এতে সার্ভিস ডেস্কে কর্মরত নারী পুলিশ সদস্য এবং সার্ভিস ডেস্ক থেকে সেবা পাওয়া সুবিধাভোগী এবং ঘর পাওয়া উপকারভোগীরা বক্তব্য রাখেন। অতিরিক্ত আইজি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী ধন্যবাদ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।