স্টাফ করেসপন্ডেন্ট:
দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন গণমাধ্যমে সুনাম ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসা শেরপুরের ১২ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে উজ্জল নামের আরেক সাংবাদিক। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উক্ত ১২ জন সাংবাদিকের নামে নোটিশ প্রদান করলে তা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। প্রশ্ন ওঠে শেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার এখতিয়ার নিয়ে। সেই সাথে কে এই উজ্জল সেটাও কৌতূহল ভরে জানতে চান পাঠকরা। মূলত প্রেসক্লাবের নির্বাচনে হেরে মাথা খারাপ হয়ে যাওয়া সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীএই উজ্জল। শেরপুর প্রেসক্লাবের নির্বাচনে বার বার পরাজিত হয়ে জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে নানা মহলে বিভ্রান্তি তৈরির পাঁয়তারার অভিযোগ ওঠেছে এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। শেরপুর প্রেসক্লাবের ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো: মেরাজ উদ্দিনসহ সিনিয়র ১২ জন গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি গণমাধ্যম অঙ্গনে জড়িত থাকায় দ্বৈত পেশার অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেন তিনি। তিনি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কাজ করার পাশাপাশি জেলা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন। তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে তিনি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারির প্রভাব খাটান। গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনে হেরে মাথা খারাপ হয়েছে উজ্জলের। এজন্য না বুঝে-শুনে এমন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার ফসিউল দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি ও দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার মো. মেরাজ উদ্দীন, আল জামিয়াতুল ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায়, জেলার নকলা উপজেলার বানের্শ্বদী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. মোশারফ হোসেন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকা, কলাপাড়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ দৈনিক আজকের বসুন্ধরা পত্রিকায়, শাহরিয়ার দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ হযরত আলী দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়, ঝিনাইগাতি উপজেলার ভটপুর আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম দ্যা নিউন্যাশন পত্রিকা, শেরপুর সদরের মডেল গার্লস্ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মাসুদ হাসান বাদল দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা, নকলার চন্দ্রকোনা কলেজের প্রভাষক মহিউদ্দিন সোহেল এসএ টিভি দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকা, নকলার সরকারি হাজি জাল মাহমুদ কলেজের প্রভাষক ড. মোহাম্মদ আনিসুর রহমান আকন্দ দ্যা ডেইলি ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকা, সরকারি হাজি জাল মাহমুদ কলেজের প্রভাষক আব্দুল মোত্তালিব সেলিম দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকা, শেরপুর সদরের নিজাম উদ্দিন কলেজের প্রভাষক যথাক্রমে রীতেশ কর্মকার দৈনিক পল্লীকন্ঠ প্রতিদিন পত্রিকায় এবং মো. মোক্তারুজ্জামান দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় কর্মরত আছেন মর্মে গত ১৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন আদিল মাহমুদ উজ্জল। অথচ ওই ১২ গণমাধ্যমকর্মীর মধ্যে হারুন অর রশিদ অনেক আগেই অবসর গ্রহণ করেছেন। তবে ওই গণমাধ্যমকর্মীদের কেউই গণমাধ্যম অঙ্গনে লাভজনক পদে জড়িত নন। সরকারের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে এমন প্রতিষ্ঠানেও কাজ করছেন না। শেরপুর তথা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার কোন গণমাধ্যম কর্মীই লাভজনক কোন পদের সাথে জড়িত নন। বিস্তারিত জানতে কথা হয় সিনিয়র আইনজীবী ও প্রাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জুলফিক্কার আলীর সাথে। তিনি জানান, সংবিধানে লাভজনক পদের ব্যাখ্যা নেই। তা আছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এর ১২ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বা সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষ বা ৫০ শতাংশের বেশি সরকারি শেয়ার সম্বলিত কোম্পানীর চাকরি বা পদকে লাভজনক পদ বলা হয়েছে। অন্যদিকে ২০০১ সালে আদালতের এক রায়ে বলা হয়, যে পদে নিয়োগ ও পদচ্যুতির ক্ষমতা সরকারের হাতে, সে পদ লাভজনক পদ। গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়োগ বা পদচ্যুতির ক্ষমতা সরকারের হাতে নেই। কাজেই মফস্বল পর্যায়ের গণমাধ্যম কর্মীরা কোন অবস্থাতেই লাভজনক পদে কর্মরত নেই। একইসাথে বেসরকারী শিক্ষকরা মিডিয়ায় লেখালেখি করতে পারবেন না, এমন নির্দেশনা বা প্রজ্ঞাপন শিক্ষা মন্ত্রনালয় বা জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় থেকে আদৌ প্রকাশ করা হয়নি। আইনজীবী জুলফিক্কার আলী প্রশ্ন করে বলেন, শিক্ষা অফিসার কোন বিধি বলে ১২ গণমাধ্যমকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন ? ওই ১২ গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ৬ জন শিক্ষকই প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার। যাদেরকে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা নোটিশ দেয়ার এখতিয়ার রাখেন না। সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবিহা জামান শাপলা বলেন, পূর্বের ন্যায় আবারো প্রেসক্লাবের ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য আদিল মাহমুদ উজ্জল ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তার কর্মকান্ডে এটাই প্রতিয়মান হচ্ছে। তবে এবার তাকে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে ব্যবস্তা গ্রহণ করার জন্য প্রেসক্লাব কর্মকর্তাদের কাছে দাবী জানাচ্ছি। শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: মেরাজ উদ্দিন বলেন, আমি এখনো কারণ দর্শানো নোটিশ হাতে পাইনি। তবে দুইবার আদিল মাহমুদ উজ্জল আমার সাথে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করে গোহারা হেরে নির্লজ্জভাবে ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। আবার ওই পদ ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছেন। তাই বিষয়টি ক্লাবের সভাপতি মো: শরিফুর রহমানের নিকট অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: রেজুয়ান বলেন, অভিযোগ দিয়ে অভিযোগকারী তার লোকজন নিয়ে আমাদেরকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছিলো। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। আমি কারোর বিরুদ্ধেই বিধি পরিপন্থী কোন কিছু করবোনা।